দর্পণ ডেস্ক : ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র, বিএনপি নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা-ভলোবাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার চির বিদায় নিলেন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণপ্লাজা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ কয়েক দফা জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ দাফন করা হয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী, তার পরিবারের সদস্য, আÍীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে খোকার লাশ পৌঁছায়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো গেটের বাইরে নিয়ে আসা হয়। বেলা ১১টার কিছু আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোকার মরদেহবাহী গাড়িটি পৌঁছায়। সেখানে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত মঞ্চে মরদেহের কফিনটি রাখা হয়। সেখানে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন- ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তোফায়েল আহম্মেদ, আ স ম ফিরোজ, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, রাশেদ খান মেনন, মশিউর রহমান রাঙ্গা, ড. মাহবুব উলাহ, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুলাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান সিনহা, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভ‚ঁইয়া, হারুন অর রশিদ, উকিল আব্দুস সাত্তার, জাহিদুর রহমান, এম মোরশেদ খান, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, নাজিম উদ্দিন আলম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রুহুল আলম চৌধুরী, এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। জাতীয় সংসদ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আবু রায়হান জানাজা পরিচালনা করেন।
শেষে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়া হয়। ভক্ত-সহকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষবারের মতো এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায়। অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক এ মেয়রকে শহীদ মিনারে নেয়া হবে- এমন খবরে আগে থেকেই সেখানে জনতার ঢল নামে। রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অনেক নারী তাকে শ্রদ্ধা জানান। রাজধানীর বাইরে থেকেও খোকাকে একনজর দেখার জন্য অনেকেই আসেন। সবাই ফুল দিয়ে এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।
সেখানে একটা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে তার তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (নগরভবন) মরহুমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে গোপীবাগে মরহুমের নিজস্ব বাসভবনে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আছর মরহুমের বাসভবন থেকে মরদেহ ধুপখোলা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খোকার মরদেহ কবরে নামানোর আগে ১ প্লাটুনের এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে পুলিশের ১৭ সদস্যের একটি চৌকস দল ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তারা এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আবদুলাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা স্যালুট জানান। এ সময় পুলিশের এডিসি নাজমুন নাহারসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সন্ধ্যায় জুরাইন কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় মরহুমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত খোকা নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ নভেম্বর দুপুরে মারা যান। ২০১৪ সাল থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে ছিলেন। খোকা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া দুইবার মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.