গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের স্বতন্দ্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক সহ ভোটারদের নৌকা প্রতীকের পক্ষ থেকে হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্দ্র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ আকতারুজ্জামান কোক্কা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরও অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
স্বতন্দ্র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতারুজ্জামান কোক্কা গনমাধ্যমকে বলেন, ’আমি সাধারন মানুষের অনুরোধে এবং দলীয় হাইকমান্ড থেকে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রার্থী হয়েছি। আমি শৈশব-কৈশোর থেকেই আওয়ামীলীগের মিছিল-মিটিং ও রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম মীর আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে এ এলাকার প্রথম এমসিএ ছিলেন। এর আগে দীর্ঘ ১৭ বছর আমি টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জনগন আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করলে আমি শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের রোড ম্যাপে যুক্ত থেকে এ উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। এছাড়া চাঁদাবাজি, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিয়ে, নারী নির্যাতন রোধে জনসাধারনকে সাথে নিয়ে কাজ করবো। ’
প্রতিদ্বন্দি¦ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সম্পর্কে আকতারুজ্জামান কোক্কা বলেন, ’সাধারন ভোটাররা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এখন ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তিনি আমার কর্মী-সমর্থক সহ ভোটারদের হুমকী প্রদান করছেন। এ উপজেলার মানুষ জানে কারা ব্যক্তি স্বার্থে জামাত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে দলে হাইব্রীড ঢুকিয়ে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এছাড়া দলীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও কোন ঠাসা করে রেখে নিজেরা রহস্যজনক ভাবে অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ইতোমধ্যে সাধারন মানুষ এদের অনুসারী ক্যাডারদেরও চিনে ফেলেছে। তাই ভোটারদের হুমকী প্রদান, কেন্দ্র দখল করে সীল পেটানো সহ নানা পরিকল্পনা করছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তার অনুসারীরা।’
স্বতন্দ্র প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ’স্বতন্ত্র প্রার্থী কোক্কা মীরা নিজে এবং তার ছেলে শিমু মিরা নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থক সহ ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন সহ বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করছে। এমনকি শিমু মীরা আমার কর্মী হিরুকে চাপলি বাজারে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করেছে। ওদের সম্পর্কে কলাপাড়ার মানুষ ভালো ভাবে জানে।’
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো: মোস্তফা কামাল (চশমা), মো: শফিকুল আলম বাবুল (টিউবওয়েল) এবং মো: নিজাম উদ্দীন (তালা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উম্মে তামিমা বিথী (ফুটবল), শাহিনা পারভিন সীমা (হাঁস) এবং লাইজু হেলেন লাকী (কলস) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে ঘিরে এসকল প্রার্থীর মাইকিং, হ্যান্ডবিল-লিফলেট বিতরন, মিছিল, সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে সরব হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকার শহর থেকে তৃনমূল জনপদ। হাট-বাজার, খেয়া ঘাট, বাসষ্ট্যান্ড, চায়ের ষ্টলে এখন ভোটারদের মাঝে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষন। তবে সাধারন মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও তৃনমূলের প্রত্যন্ত জনপদের ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ন পরিবেশ নিশ্চিত হলে এবং কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়লে পাল্টে যেতে পারে সব হিসাব নিকাশ।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো: আবদুর রশিদ জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১, ৭২, ২৫৯। তন্মধ্যে পুরুষ ৮৬, ৪২০ এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৮৫, ৮৩৯। মোট ভোট কেন্দ্র ৭৪ এবং ভোট কক্ষ সংখ্যা ৪৩১। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে কমিশন সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে গত ৭ ও ৮ মার্চ ৮০ জন প্রিজাইডিং, ৪৫২ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ৯০৫ জন পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী এবং পুলিশ সুপার মইনুল হাসান জানান, ’নির্বাচনে কোন রকম অগ্রহনযোগ্য আচরন সহ্য করা হবে না। নির্বাচন বানচালকারী ও কেন্দ্র দখলকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি প্রয়োজন হয় সুষ্ঠু ভোটের জন্য বুলেট ব্যবহার করা হবে।’