বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি একথা জানান।
পাঠকদের জন্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘বরগুনার হত্যার গ্রেপ্তার এবং বিচার হবে, হতেই হবে।
ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেয়া হয়েছে বলে সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। অবশ্যই ভালো।
কিন্তু অন্য সবকিছু বাদ দিলাম। গতকাল মোটামুটি একই সময়ে রাজশাহীর তানোরে বাজারে আম বিক্রি করতে গিয়ে একইভাবে নিহত হয়েছে আর একজন তরুণ, প্রকাশ্যেই দিবালোকেই হত্যা করেছে পাশের আর এক দোকানদারের ছেলে। নিহতের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে, সে সেখানকার একটি ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। না কোনো টেন্ডার নিয়ে বা বান্ধবী নিয়ে ফেসাদ নয়। সংসার চালাতে নিজেই বাগানের আম বিক্রি করতে গিয়েছিল সেই হতভাগা তরুণ।
সব মৃত্যুই আমাকে নাড়া দেয়। তরুণ-তরুণীর মৃত্যু একটু বেশি নাড়া দেয়। শিশুর মৃত্যু আরও বেশি নাড়া দেয়।
আমরা বরগুনার মতো সবগুলোর ভিডিও দেখতে পাই না। গতকাল হয়তো এই দুইয়ের বাইরেও মানুষ খুন হয়েছে বা অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা সবগুলোর খোঁজ রাখি না। তবে সচেতনতা সামাজিক সমস্যাগুলোকে কমিয়ে আনবে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তারা মনে হয় না সাধারণ পথচারী বা ছাত্র। অবশ্যই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমরা নিশ্চিত করবো প্রথমে গ্রেপ্তার তারপর ন্যায় বিচার। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
এক ঘণ্টা আগে দেওয়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই স্ট্যাটাসে প্রায় আড়াই হাজার লাইক, সাড়ে চারশ মন্তব্য এবং ১৪৪ জন শেয়ার করেছেন। সেখানে বরগুনার এই ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া স্ট্যাটাসের বিপরীতে অনেকেই রাগ,ক্ষোভ ও সমালোচনা করেছেন।
নাঈম চাকলাদার নামে একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘এই বিচার হবে না আমি ১০০% নিশ্চিত। আপনি যতই বলেন না কেন?? যে দেশে বিশ্বজিৎ হত্যার ফাঁসির আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পায়, সেদেশে বিচার!!!হাসাইলেন লিডার।‘
সাইফুল ইসলাম বাপ্পী নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে আমরা নিজেরাই এক একজন খুনী, ভিকটিম, তদন্তকারী, সাংবাদিক এবং সর্বোপরি বিচারকও বটে! যা কিছু ঘটে তার সব কিছুতেই জড়িত কিন্তু নিজেদের যার যার মতামত এই ভার্চ্যুয়াল জগতেই রাখি। ১৬ কোটি মানুষের ১৬ কোটি পার্সেপশান। একটা জায়গায় এক হতে হবে সেটা আমরা কখনই হতে পারি না। সেটা হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়ানো। অন্যের দোষ খুঁজতে এতো বেশি ব্যস্ত থাকি যে নিজের ছোটো ছোটো অন্যায়গুলোকে অবচেতন মনেই প্রশ্রয় দিচ্ছি। সমাজ, রাষ্ট্র যে আমার নিজের এবং দায়িত্বশীল হতে হবে সব ক্ষেত্রে, এটাই পালন করি না।’
এহসানুল আমীন নামে এক ব্যক্তি মন্তব্যে জানিয়েছেন, ‘বাতাসে লাশের গন্ধ। একজন মন্ত্রীর স্ট্যাটাসে যে কমেন্ট আসছে, তাতে কি মনে হয় মানুষ বিচারের বিষয়ে আশাবাদী?’
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।ওইদিন সকাল ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে চার থেকে পাঁচজন সন্ত্রাসী রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
এক পর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রিফাত মারা যান।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই মামলার চার নম্বর আসামি চন্দনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।