গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় তিন
সন্তানের জননী সাবেকুন্নাহার ঝুমুর (৩২) কে কোদালের আচারি দিয়ে পিটিয়ে
শরীরের বিভিন্ন স্থান থেতলে দিয়েছে পাষন্ড স্বামী। এছাড়া ঘরের মধ্যে আটকে
রেখে স্বামী মো. রফিকুল ইসলাম মীর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়
স্ত্রীর উপর। এমনকি চড়-থাপ্পর দিয়ে তার দু’কানের শ্রবন শক্তি নষ্ট করে
দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের চর
নিশানবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আহত গৃহবধূর
ভাই বুধবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করে
কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার নির্যাতিতা ঝুমুর নিজেই নারী
নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল
(ওসিসি) তে গিয়ে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দেন। ওসিসি বিষয়টি আমলে নিয়ে
তার কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ রাখেন।

নির্যাতিত গৃহবধূ ঝুমুর জানায়, আমারে বন্দী কারাগারের মতো রাখা হতো। কোন
আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দিতনা। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে খুন করতে
চেয়েছিল। দিশেহারা এ গৃহবধুকে তার শ্বশুর আব্দুল হক ও শাশুড়ির সামনে বসেই
এমন নির্দয় নির্যাতন করা হতো বলে ঝুমুরের দাবি। বর্তমানে সে তিন সন্তান
নিয়ে কী করবেন তাও বুঝে উঠতে পারছেন না। শুধু চোখের পানি ফেলছেন।

আহত ঝুমুরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর মাতুব্বর জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর আগে ধানখালী
ইউনিয়নের চর নিশানবাড়িয়া গ্রামে আব্দুল হক মীরের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম
মীর’র সাথে পারিবারিক সম্মতিক্রমে তার বোনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আসে
তিনটি কন্যা সন্তান। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগ থেকেই তার
বোনের বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার স্ত্রীর এক সন্তানের জননীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে
পরে তার বোন জামাই রফিক। তারা এক পর্যায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এনিয়ে
প্রায়শ:ই নির্যাতন চালানো হতো ঝুমুরের উপর। বোনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা
করে সবকিছুই মুখ বুঝে সহ্য করতাম। সর্বশেষ মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘরের দরজা
বন্ধ করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পাশের বাড়ির নিকট আত্মীয় মোবাইল করে
নির্যাতনের বিষয়টি জানায়। ওই রাতে কোন উপায় না পেয়ে ইউপি সদস্য মো.
জালালকে অবগত করা হয়। পরদিন বুধবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ
তালুকদারের সহযোগিতায় ঝুমুরকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা
হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নির্যাতিতা ঝুমুরের বড় ভাই
জাহঙ্গীর মাতুব্বর জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম মীর’র সাথে একাধিক বার যোগাযোগের
চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আশরাফুল জানান, ’গৃহবধূ
ঝুমুরের শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখন ফের কানের পর্দায়
সমস্যার কথা বলছে। কানের চিকিৎসা অন্যত্র করানোর জন্য তাকে পরামর্শ দেয়া
হয়েছে।’
ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান রিয়াজ তালুকদার জানান, ’বিষয়টি অমানবিক।
গৃহবধূর ভাই আমাকে জানানোর পর একজনকে পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার
জন্য হাসপাতালে পাঠাই।’
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ
ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) উপজেলা প্রোগ্রাম আফিসার মো. ইদ্রিস আলম জানান,
’ভিকটিমের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা শুনেছি। সে লিখিত দিয়েছে।
তাৎক্ষনিক ভাবে অভিযুক্ত রফিকের সাথে কথা বলেছি।’

কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান , তিনি এ ধরনের কোন অভিযোগ
পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।