অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সঙ্গে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়নি পুলিশ।

এ কারণে সোমবার দেওয়া অভিযোগপত্রে তার নাম রাখা হয়নি। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আলোচিত ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারের পর দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন হাসনাত। তাকে এ হামলার প্রধান সন্দেহভাজন মনে করা হচ্ছিল।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া কেউই হাসনাত রেজাউল করিমের নাম বলেননি। তদন্তেও হামলার কোনো অংশে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এ কারণে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবি একটি সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়ে গুলশানে হামলা করেছিল। তবে তাদের পরিকল্পনার কোথাও হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তদন্তে হাসনাত করিমের দেওয়া ব্যাখ্যার চেয়ে অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই বিষয়টি চার্জশিটেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হামলার সময় সপরিবারে হলি আর্টিসান রেস্তরাঁয় ছিলেন যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক হাসনাত। তিনি পুলিশকে জানান, মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। হামলাকারীদের সঙ্গে তার কোনো যোগসাজশ ছিল না। ২ জুলাই সকালে হলি আর্টিসানে কমান্ডো অভিযানের পর তারা মুক্ত হন।

এদিকে অভিযান শুরুর আগে তোলা একাধিক ছবিতে ক্যাফের ছাদে হাসনাতকে দুই জঙ্গির সঙ্গে দেখা যায়। এতে হামলায় তার সম্পৃক্ততার গুঞ্জন জোরালো হয়ে ওঠে। হাসনাতের স্ত্রী অবশ্য বলেছিলেন, জিম্মি থাকা অবস্থায় জঙ্গিদের নির্দেশ মেনে অনেক কিছুই করতে হয়েছে তাদের।

সেই ছবি প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ছবিগুলো বিশ্লেষণ করেছে পুলিশ। সেই বিশ্লেষণের ফলাফলও আদালতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রথমে গুঞ্জন ছিল হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে হাসনাতকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তখন জানা যায়, বাবার ব্যবসা দেখাশোনার কথা জানিয়ে ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে হাসনাত নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নেন।

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, বিভিন্ন সময় নব্য জেএমবির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কেউ বলেননি- হাসনাত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এ মামলায় যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের কেউ তার জড়িত থাকার কথা বলেননি। এ ছাড়া সব ধরনের আলামত বিশ্লেষণ করে তার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। তার ব্যাংকিং লেনদেন খতিয়ে দেখা হয়েছে। তিনি কার সঙ্গে মিশতেন, তাও নানাভাবে যাচাই করা হয়েছে। এমনকি যে মেয়ের জন্মদিনের কথা বলে তিনি ঘটনার দিন হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন, তার বার্থ সার্টিফিকেট দেখা হয়েছে। কোনো তদন্তে হাসনাতের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপরও যদি হলি আর্টিজান হামলায় হাসনাতের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই যে কোনো মানুষ অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়। কে কী বিশ্বাস করছেন বা কী জনশ্রুতি রয়েছে, সেটা মুখ্য নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাতের কথাবার্তা বলার ছবিকে ‘পরিস্থিতির শিকার’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জঙ্গিরা তাকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। জঙ্গিরা জানতে পারে হলি আর্টিজানের আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্নাইপার রাইফেল বসিয়েছে। তাই অস্ত্রের মুখে তাকে ছাদে নেয় জঙ্গিরা, যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভ্রান্তিতে পড়ে।

অন্যদিকে, হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের মধ্যে নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল। একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন হাসনাত। তাই তাদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখা হয়।

ওই হামলার মাসখানেক পর ৪ আগস্ট হাসনাতকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তিনি অনেকবার জামিনের আবেদন করেন, তবে তা মঞ্জুর হয়নি। জামিন শুনানিতে আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, অভিযোগপত্রে তার নাম থাকতে পারে। এর আগে গ্রেফতার প্রসঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারে আসামির কলামে কারও নাম ছিল না। তবে এজাহারের বয়ানের মধ্যে হাসনাতের নাম ছিল।

গুলশান হামলার পরদিন হাসনাতের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খানের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। অভিযানের আগের ছবি-ভিডিওতে তাকে জঙ্গিদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। পরে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় পুলিশ।