মোঃ সাজেদুর রহমান চৌধুরী :
গত কয়েক দিন আগে বাসের সিটে বসে ছিলাম। হঠাৎ ফুটফুটে একটি ১০/১২ বছরের বাচ্চা এসে আমার হাতে ওয়াজের একটি হ্যান্ডবিল্ডি ধরিয়ে দিল। বাচ্চাটার আকুতি ভরা কন্ঠে বললো ‘আংকেল ১০ টা টেহা দেন মাহফিল হইবো’। পোস্টারের বড় বড় বক্তাদের নাম দেখে চোখ যেন আমার ঝল ঝল করছিল। কারণ তাদের সম্পর্কে আমার জানা আছে তারা কেমন বাজেটের বক্তা। এর মধ্যে দেখলাম হাফিজুর রহমান সিদ্দিকের নামটাও। বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আব্বা কি করে? উত্তর দিলো আমার আব্বা মালয়েশিয়াতে থাকেন। বুঝলাম ছেলেটি ভদ্র পরিবারের। বললাম তোমাকে এখানে কালেকশনে কে পাঠিয়েছে? বললো আমাদের মাদ্রাসা থেকে। জিজ্ঞেস করলাম কত পেয়েছো সব মিলিয়ে? বললো সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭০ টাকা। বাচ্চাটির হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে বললাম, যাও বাবা সোজা মাদ্রসায় চলে যাও, অনেক কালেকশন করেছো যাওয়ার সময় যে কয়জন বাচ্চা এক সাথে ছিল তাদের আইসক্রিম কেনার টাকা দিয়ে বললাম, আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে চলে যাও তোমরা। আর কখনও এই ধরনের কাজ করতে এসো না। তখন বাচ্চাদের মধ্যে থেকে একজন বললো আমাদের অনেক কষ্ট হয় এভাবে রাস্তা রাস্তায় রোদ্রের মধ্যে টাকা সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমরা যদি না আসতে চাই তাহলে মাদ্রাসার হুজুররা আমাদের মারেও খাবার বন্ধ করে দেয়। লজ্জায় বাসভর্তি মানুষের সামনে আমার মাথানত হয়ে যাচ্ছিল।
ইসলাম ধর্মের কোরআন ও হাদিসের কোথায় লেখা আছে মাদ্রাসার শিশু বাচ্চাদের দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করিয়ে সেই ভিক্ষার টাকা দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা?
কোন সমাজে আমরা বাস করছি? শিশু বাচ্চাদের দিয়ে হুজুরদের কন্ট্রাকের টাকা জোগার করা হচ্ছে। কথিত এসব মোহতামিম আর মাদ্রাসার কমিটিকে, কে বলেছে মাহফিল করতে? কে বলেছে ওয়াজ মাহফিলের নামে এসব বাচ্চাদের ভিক্ষাবৃত্তি শিখাতে। কন্ঠবাজ, কন্ট্রাকবাজ, গলাবাজ, শিশু বক্তা, অযোগ্য, এলেমহীন, সুরেলা বক্তাদের দিয়ে মাহফিল জমিয়ে বক্তাদের হাতে লক্ষ্য টাকার খাম ধরিয়ে নিজেকে ইসলামের সৈনিক মনে করে। বন্ধ হোক মাদ্রাসার ছোট বাচ্চাদের দিয়ে এসব ভিক্ষাবৃত্তি। বন্ধ হোকে এসব অনৈতিকতা।ওয়াজ মাহফিল ও মাদ্রাসার-মক্তব পরিচালনার জন্য ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে রোদে পুরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে ব্যস্ত সড়কের পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্থ সংগ্রহ কিংবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার হাঁটিয়ে অর্ধ পেটে কখনোও বা খালি পেটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল সংগ্রহ করতে পাঠানো বন্ধ করা হোক। এই অপরাধের জন্য আয়োজকদের শিশু শ্রম বা শিশু নির্যাতন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। যে দেশে ওয়াজ মাহফিল হয় না সেই দেশে কি ইসলাম ধর্ম টিকে থাকে না? ওয়াজ মাহফিলের ব্যবসা বন্ধ করে মাদ্রাসার শিশু বাচ্চাদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব যেমন সরকারের, তেমনি আমাদের সমাজের সকল সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া উচিত এই অনৈতিক ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে।