৪৮ ঘণ্টা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ভোটের কারণে। শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ভোটের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। তবে শনিবার বিকেল ৫টা থেকে রোববার অর্থাৎ ভোটের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুধু ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অপর এক নির্দেশনায় টানা চার দিনের বন্ধের মধ্যে ব্যাংকগুলোর এটিএম সেবা ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্বক্ষণিক চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও ভোটার আকৃষ্ট করতে টাকা ছড়ানো বন্ধে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকার পাশাপাশি অনেক সময় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন হয়ে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠক থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব ধরনের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। তবে ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা লেনদেনের সুযোগ রেখে সীমিত আকারে এ সেবা চালু রাখা যেতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী ব্যাংক বা সাবসিডিয়ারিকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রাহকসহ সংশ্নিষ্ট সব পক্ষকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে মোট ৩১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৫১ কোটি টাকা। সারাদেশের আট লাখ ৮০ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে ছয় কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে সচল অ্যাকাউন্ট তিন কোটি ৫৫ লাখ। মোবাইল ব্যাংকিং লেদেনের বড় অংশই হয় বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেটের মাধ্যমে।
চালু থাকবে এটিএম সেবা ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং : সাপ্তাহিক ছুটি, নির্বাচন ও ব্যাংক হলিডের কারণে আজ থেকে টানা চার দিন ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকবে। বন্ধের মধ্যে এটিএম বুথ, পস ও ই-পেমেন্ট গেটওয়ের লেনদেনে গ্রাহক যেন হয়রানি না হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছুটির মধ্যেও এসব ইলেকট্রনিক মাধ্যমে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সার্বক্ষণিক এটিএম সেবা চালু রাখতে হবে। এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বন্ধের মধ্যেও পয়েন্ট অব সেলস বা পসের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্ডভিত্তিক ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট’ লেনদেনের ক্ষেত্রে দুই স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা (টু এফএ) ব্যবস্থা চালু রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট নয় হাজার ৬৯৮টি এটিএম বুথ ও ৪০ হাজার ৬৯৩টি পস টার্মিনাল রয়েছে। মোট কার্ড রয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখের বেশি। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড রয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ। আর ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ১০ লাখ। প্রিপেইড কার্ড রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার।