জাহিদ হাসান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার লালন আঁখড়াবাড়িতে দোল পুর্ণিমার রাতে আনুষ্ঠানিভাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজারে ৩দিন ব্যাপী স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (২০ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালন মুক্ত মঞ্চে এ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মরণোৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম।
উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “এই মার্চ মাসের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু যে ডাক দিয়েছিলেন সেই ডাকের সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। আমরা পাকিস্থানের কোন আদেশ মানিনি। বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর থেকে যে আদেশ দিয়েছে সেটা মেনেছি।”
তিনি আরো বলেন, “লালনের সাথে মানুষের একটা আত্মার সর্ম্পক রয়েছে। লালন শাহ্ এর মতো মানুষকে বিশে^র কাছে উচুঁ করে পৃথিবীর মধ্যে আরেকটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। মানুসের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে, পশুপাখি, গাছপালা, প্রকৃতিকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। তবেই আজকে লালনের এই স্মরণোৎসবে আসা স্বার্থক হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, “বাউল স¤্রাট লালন শাহ্ ছিলেন এক মহান স্বাধক। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। অথচ তিনি দেশ ও সমাজ নিয়ে যে বানী সেগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। সমাজকে ভালোভাবে গড়ার জন্য কি করনীয় সে কথা বলেছেন। কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায় সে কথা বলেছেন। আজকে লালনের দর্শন মানুষের মনে ধারন করলে সন্ত্রাস, মারামারি দুর হয়ে যেত। দেশ থেকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি দুর করার জন্য লালনের দর্শন সবচেয়ে সময় উপযোগী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ খ ম সরোয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত, জেলা পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খাঁন, সাধারন সম্পাদক আজগার আলী, কুষ্টিয়া কোর্টের জিপি এ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান মাসুম, পিপি অনুপ কুমার নন্দী, কুমারখালী পৌর মেয়র শামছুজ্জামান অরুন, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসাবে আলোচনা করেন কুষ্টিয়ার ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ-আসকারী।
বাউল স¤্রাট লালন শাহ্ এর জীবনের আলোকে আলোচনা করেন লালন মাজারের খাদেম মহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আসলাম হোসেন।
এবারের আয়োজনে মরমী সাধক বাউল স¤্রাট ফকির লালন সাঁইজির অমর বানী “মনের গরল যাবে যখন, সুধাময় সব দেখবি তখন” প্রতিপাদ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমীর আয়াজনে তিন দিন ব্যাপি এ লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
মুল মঞ্চে আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহ্ এর আত্মাধিক গানের আসর। যেখানে দেশ বরেণ্য লালন শিল্পী ও লালন একাডেমীর শিল্পীরা লালন সংগীত পরিবেশন করেন। শুক্রবার (২২ মার্চ) পর্যন্ত চলবে এ লালন স্মরণোৎসব। সেই সাথে প্রতিদিন গভীর রাতভর চলবে লালন মুক্তমঞ্চে লালন সংগীতের আসর এবং গ্রামীন মেলা।