সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর কুমার সূত্রধর। দুটো হাতই অবশ ছিল তার। পায়েও জোর কম। অপরের সাহায্য নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো সে। অথচ স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে ছিল অদম্য। চেয়েছিল পড়াশুনা করে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তাই তো মুখ দিয়ে লিখে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। অথচ ফল প্রকাশের আগেই জীবন সাঙ্গ করে চলে গেলো ঈশ্বর কুমার। 

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল মারা যায় সে। রাতেই স্কুলের পক্ষ থেকে তার মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। 

ঈশ্বর পাইকপাড়া গ্রামের প্রয়াত প্রপুল্ল কুমার সূত্রধরের ছেলে। এ বছর খন্দকার আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে। এসএসির মতোই মুখ দিয়ে লিখেই পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ঈশ্বর। জন্মের পরপরই বাবা-মাকে হারায় সে। দুঃস্থ পরিবারের সন্তান ঈশ্বর তার বড়বোন রেবা রানীর ঘরেই বড় হয়।

ঈশ্বর কুমারের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সহযোগিতাকারী আব্দুল মজিদ স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ইউসুফ আলী মন্টু। তিনি জানান, এ বছর বিজ্ঞান স্কুল উপকেন্দ্রে মুখ দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল ঈশ্বর। কষ্ট করে দীর্ঘ সময় লিখতে গিয়ে পরীক্ষার শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও। এ ব্যাপারে সে-সময় সমকালে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেটি এসএসসি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামানের নজরে এলে তিনি ঈশ্বর কুমারের জন্য পরীক্ষা কক্ষে একজন শ্রুতি লেখকের ব্যবস্থা করে দেন। 

তিনি আরও জানান, এসএসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দিন আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় ইশ্বর। বৃহস্পতিবার বিকেলে না ফেরার দেশে চলে যায় সে। 

ঈশ্বরের বড় বোন রেবা রানী জানান, তার প্রতিবন্ধী ভাইটি লেখাপড়া শিখে একজন আইনজীবী হবার স্বপ্ন লালন করতো। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই সে চলে গেলো।