আহারে ইমিগ্রেশন

একটু ভালো করে দেখো তো, আমি খেকশিয়ালে রূপান্তর হচ্ছি? আমি বল্লাম- যাক তাহলে নিজেই টের পেলেন। মুখটা তো কবে হয়ে গেছে, ঘাড়ের নিচে নামছে রূপান্তর।

– ধ্যাৎ, একি কাফকার গল্প নাকি?

বাসানিও ঘোষ ইতিমধ্যে ইমিগ্রেশন ল’ ইয়ার হিসেবে টরন্টো শহরে নাম করেছেন। বাবা তার নাম রেখে ছিলেন শেক্সপিয়ারের চরিত্রের নাম থেকে। মানুষও তিনি বিশ্বসাহিত্য আর পেইন্টিংয়ে ডোবা মানুষ। তিনি ইমিগ্রেশনের কাজ করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। এত মিথ্যা, এত বানোয়াট গল্প এত ফেরেববাজি অন্য কোনো প্রফেশনে নেই। তিনি ভালো মানুষ বলেই তিনি টের পাচ্ছেন। তিনি বদলে যাচ্ছেন, একটি শেয়ালের মতো স্বার্থপর হয়ে উঠছেন। এক সকালে শুধু স্ত্রীকে বল্লেন- বদলে ফেলছেন রমরমা অবস্থায় ওঠা ইমিগ্রেশন ল’ ইয়ার প্রফেশন। হয়ে গেলেন এক্সিডেন্ট ল’ ইয়ার। এরপর শান্তিতে দিন কাটাতে লাগলেন তিনি।

দুই ধরনের ইমিগ্রেশন বেশি গুরুত্ব পায়। ইমিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন একই মনে হয়, মানেও একই হতে পারে। তবে চরিত্র আলাদা। প্রথমত, যে কোনো দেশের ইমিগ্রেশন নিতে সেই দেশের আইন অনুযায়ী জমা দেবেন কাগজপত্র। শুরু হবে বছরের পর বছর কাগজ চালাচালি। মাছ ধরার মতো ধৈর্য ধরে বসে থাকবেন। যা যা দরকার পরিপূর্ণ হলে সেই দেশের ইমিগ্রেশন পেয়ে যাবেন। সে দেশের এয়ারপোর্টে গিয়ে নামলে আপনাকে ওয়েলকাম করবে। অতি সহজসরল ইমিগ্রেশন পদ্ধতি। আর মাইগ্রেশন হচ্ছে, প্রায় জোর করে গিয়ে থেকে যাওয়ার বৈধ হতে কাগজপত্রের জন্যে যুদ্ধ করা।

প্রথমটিতে আইনজীবীর কাজ তেমন কিছু নেই। তবে দ্বিতীয়টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন আপনার ল’ ইয়ার। এর একটু ভুলের জন্য আপনি ডিপোর্ট হয়ে যেতে পারেন। আবার সোনার হরিণ থাকার অনুমতি ও ইমিগ্রেশন তিনি পাইয়ে দেন। দেশের সাইজ ও সমাজব্যবস্থাও ইমিগ্রেশন আকর্ষণের একটা বড় ব্যাপার। ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে আকর্ষণ করে ইমিগ্রেশন প্রার্থীদের, বড় দেশ হওয়ার সত্ত্বে রাশিয়া তেমনটা করে না। ইউরোপের দেশগুলোর আয়তন বেশ ছোট্ট, তাই তারা কঠিনভাবে বাধা দেয় মানুষদের যারা জোর করে ঢুকে পড়ে আইনি মারপ্যাঁচ দিয়ে বছরের পর বছর থাকে। এক সময় স্থায়ী হওয়ার অনুমতি পর্যন্ত আদায় করে নেয়। ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে তো সবচেয়ে সহজ মাইগ্রেশনের পন্থা বিয়ে করে ইমিগ্রেশন পাওয়াও দীর্ঘ ও কঠিন করে তুলেছে। না করে উপায়ও নেই। যেহেতু নিজেদেরই ঠাঁই হয় না দেশে। তার ওপর অদক্ষ তাদের ভাষায় জ্ঞানহীন অন্য দেশের মানুষদের ঠাঁই দিলে নিজেদের অবস্থাই পতন হবে। ইদানীং ইতালির, গ্রিসের অবস্থা যা হচ্ছে। এক, দুই যুগ আগে জার্মানি ছিল এমন দেশ, যেখানে গেলে অমানুষিক পরিশ্রম করলে কালেক্রমে ইমিগ্রেশন জুটে যেত। এখন আর সেই অবস্থা নেই জার্মানির। সর্বকালে ল্যান্ড অব অপচুনিটিখ্যাত আমেরিকা অর্থাৎ, ইউএসএ গোটা বিশ্বের মানুষকে ঠাঁই দিতে লিবার্টি স্ট্যাচু মশাল আর বই হাতে হাতছানি দিয়ে যেন ডাকত- আয়, আয়। সেই ডাক বন্ধ হওয়ার পরও সেখানে ইমিগ্রেশনের আশায় বিশ্বের মানুষের যাওয়া থামেনি। আমেরিকাই এমন একটা দেশ ছিল যাদের ডলার রাজত্ব করত সারা বিশ্বে। মানুষ ভাগ্য বদলাতে এসে ডলারের জাদুর মায়ায় বশ হয়ে ভুলে যেত তার নিজের দেশ এমনকি পিতামাতা আর স্ত্রী সন্তানদের। আমেরিকায় নিউইয়র্ক সেই স্বর্গ যেখানে যুগের পর যুগ ইমিগ্রেশন না পেয়ে ইনলিগ্যালি জীবন কাটিয়েছে মানুষ। যৌবনে এসে বৃদ্ধ হয়ে মারা গেছে অথচ ইমিগ্রেশন জোটেনি। আমেরিকায়ই গত শতবছর ধরে রমরমা বাণিজ্য চলে কন্ট্রাক্টে বিয়ে করে, বিয়ে সূত্রে ইমিগ্রেশন পাওয়ার পথ করে দেওয়া। বিশেষ করে পুরুষ তরুণরা এই ফাঁদে পড়ে। আমেরিকার পুরোনো দিনের স্লেভ অর্থাৎ, দাসের মতো অমানুষিক পরিশ্রম করে যে ডলার কামায় তার অর্ধেক কেড়ে নেয় তাদের কাগুজে বই। না দিয়ে উপায়ও নেই। তাই ইমিগ্রেশনের সোনার হরিণ পেতে বছরের পর বছর চলতে থাকে এই টাকা দেওয়ার পালা। নানা অজুহাতে কাগুজে বউয়েরা দীর্ঘায়িত করে। যত লম্বা সময় টানতে পারে, ততই তাদের লাভ। বসে বসে এমন আরামে ডলার কামানোর অন্য কোনো রাস্তা তো নেই। সব থেকে দুর্ভাগ্য হয় দুই কিংবা তিন বছর পর যখন প্রমাণিত হয় এটি একটি বানানো বিয়ে শুধু ইমিগ্রেশনের জন্যে। তখন ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো ইমিগ্রেশন স্বপ্ন। আমি দেখেছি অনেক বাঙালি পুরুষকে যারা একবার প্রতারিত হয়ে এদিক-ওদিক লুকিয়ে থেকে আবার অন্য কোনো মেয়ের পাল্লায় ইচ্ছাকৃতভাবে গিয়ে পড়েছে। ভেবেছে গতবারের মহিলা একটা দজ্জাল ছিল। এবার বেশ শান্ত-ভালো সে বিট্রে করার মতো নয়। পরে দেখা গেল আগেরটি তো মাঝেমধ্যে ডলার কম পেলে গালাগাল করত নতুনটি কোমর থেকে বেল্ট খুলে হাতে দিতে বলে। বেল্ট হাতে পেলে চাবুকের মতো হাতে-পায়ে-পিঠে চালাতে থাকে। এমন ত্রাস সৃষ্টি করে, যাতে ম্যাকডোনাল্ডে বার্গার খাওয়া বাদ দিয়েও ডলার ঠিক রাখে। শুধু একটা আশায়, যতই জালিম হোক এ মহিলা ইমিগ্রেশন জাজকে বিশ্বাস করাতে পারবে তারা সত্যি বিবাহিত। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দু-তিন বছর পর প্রায় কেস সেটেল হয়-হয় অবস্থায় আচমকা মেয়েটি একদিন মালপত্র নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে হাওয়া। ফোনে শুধু বলে যায়, সে তার বয়ফ্রেন্ড আরিজোনায় মুভ করেছে বলে সাময়িক সময়ের জন্যে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসবে।

অনেক সূত্র ধরে মেয়েটি খুঁজে বের করে হাতে-পায়ে ধরে আর ক’টা মাস থাকো নিউইয়র্কে। তা না হলে আমার সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কী কষ্টে ইমিগ্রেশন তরী কূলে ভিড়িয়ে এনেছি। মেয়েটি সুযোগ পেয়ে যায়, বলে- দ্যাখো আমি তো আমার বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পনেরো হাজার ডলার নিয়েছি। তা যদি তুমি এই এক সপ্তাহ জোগাড় করে দিতে পার, তাহলে ওকে তা দিয়ে আমি না হয় নিউইয়র্কে থাকতে পারি। দিনরাত এক করে গোটা কমিউনিটির কাছে হাত পেতে এমনকি দেশ থেকে টাকা এনেও হয়তো দু-তিন হাজার কম হয়। ক্যাশ ডলারের গাট্টি মেয়েটির হাতে দিয়ে হাতজোড় করে বলে মাত্র দুই মাসে বাকিটা দিয়ে দিচ্ছি, তুমি যেও না।

মেয়েটি হেসে বলে- ওকে! ঠিক আছে।

পরের হেয়ারিংয়ের দিন কোর্টে আর খুঁজে পাওয়া যায় না মেয়েটিকে। দেশেও ব্যাঙের ছাতার মতো এজেন্সি গজিয়ে আছে যা আপনার নানা টেস্ট নিয়ে পর্যায় ক্রমে টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। তবে কানাডার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাই এমন যে, কেউ ইলিগ্যাল থাকতে পারবে না। আমেরিকার চেয়ে ঠিক উল্টো চিত্র। আমেরিকা থেকে ল্যান্ড বর্ডার দিয়ে হোক আর ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে হোক কানাডার মাটি এসে দু’হাত তুলে দাঁড়ালে কানাডা ইমিগ্রেশন বোঝে এরা হচ্ছে জীবন ঝুঁকি থেকে এসেছে প্রাণ বাঁচাতে, আশ্রয়প্রার্থী। কেউ রাজনৈতিক, কেউ সামাজিক, কেউ ধর্মভিন্নতার মৃত্যুঝুঁকি কারণ দেখিয়ে হাত তোলে। এতক্ষণ বেশিরভাগ বল্লাম জোর করে হেঁইগু … ইমিগ্রেশনের কথা। প্রথাগত ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে তেমন কিবা বলব। প্রথাগত অ্যাপ্লাই করবেন ইমিগ্রেশন ল’ ইয়ার নিলে সাহায্য করবে। সময় গেলেও ক্র্যাইটেরিয়া ফুলফিল হলে ইমিগ্রেশন হয়ে যাবে। তবে আরেকটা পথে দেশের ধনী ও বিশেষ করে দেশের ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা যারা হাওয়া করেন নির্লিপ্তভাবে, তারা টাকার জোরে নেন। ইনভেস্টর ভিসা মানে ইমিগ্রেশন নেওয়া ইনভেস্টের বিনিময়। ঠিক কত কোটি টাকা ইনভেস্ট করলে তা দ্রুত মাত্র ছয় থেকে নয় মাসে হয়ে যায় তা ঠিক আমি জানি না। তবে দ্রুত বাড়ছে কানাডায় এইভাবে ইমিগ্রেশন নেওয়া মানুষ। হপ্তা দশ দিনেই টরন্টোর বাংলা টাউনে চায়ের দোকান সুইচ বেকারিতে বসে আঙুল তুলে তারা বলেন- ওই মার্কেটটা কত মিলিয়ন হবে? আমি কিনতে চাই। তবে এরা নিজের পরিবারের জন্যে বাড়ি কেনেন ঢাকার বারিধারাস্বরূপ বেভিউ অথবা নতুন গড়ে ওঠা বিচমন্ডহিল সিটিতে লাইনকে লাইন এদের মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলারে কেনা বাড়িগুলোকেই অনেকে ‘বেগমপাড়া’ বলেন।

শুরুতেই বাসানিও ঘোষের কথা বলেছিলাম। তিনি ইমিগ্রেশন ল’ ইয়ার প্রফেশন ছেড়ে দিয়ে নিজের খেকশিয়াল রূপান্তর ঠেকিয়েছেন। তার অফিসেই আমি প্রথম লেভানিজ মহিলা সেলিন হসামকে দেখেছিলাম নিজের পাঁচ সন্তান নিয়ে এসেছেন আমেরিকায় ইমিগ্রেশন নিতে ব্যর্থ হয়ে। চল্লিশের কাছে এমন সুন্দরী মহিলা কখনো-সখনো চোখে পড়ে। দেহের বাঁধনও বেশ ধারালো। এ রকম মায়ের বিশ কিংবা একুশ বছরের বড় মেয়ে যেকি রকম দেখতে হবে, বুঝতেই পারেন। যেন একটা পরিবার ভাইবোন নিয়ে বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। আমি আলাপ করার লোভ সামলাতে পারিনি। বাসানিও বাবুকে বলায় তিনি ডেকে আলাপ করিয়ে দিয়ে ছিলেন মায়ের সঙ্গে। মা-ই বল্লেন, আমার বড় মেয়ে ফারাহ। বাসানিও বলেছিলেন পরে তাদের বিস্তারিত। খ্রিষ্টানপাড়ায় তাদের বাড়ি বৈরুতে। বাবার বিশাল গ্রোসারি স্টোর ছিল। তারা আমেরিকা চলে আসবেন বলে পুরো পরিবার ভিসাও পেয়ে গিয়েছিলেন। দোকান বিক্রির চক্করে ছিলেন। এর মধ্যে চরম দাঙ্গা শুরু হলো মুসলিম-খ্রিষ্টান। সব দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে আগুন দেওয়ায় সেলিন হাসমের স্বামী বা ফারার বাবা বের হয়ে আসতে পারেননি। পুড়ে মারা গেছেন। এরপর বাড়িঘর যা ছিল সব বিক্রি করে পাঁচ সন্তান নিয়ে সেলিন নিউইয়র্কে চলে আসেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে। আমেরিকায় ডিপোটেশন অর্ডার হওয়ায় তারা চলে আসেন কানাডায়। কানাডায় এক লেবানিজ আইনজীবী তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী কেস ঠিকভাবে সাজাতে পারেনি। পরপর দু’বার রিজেক্ট হওয়ার পর তারা এসেছেন বাসানিও ঘোষের কাছে। এরাই প্রকৃত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী অথচ এরাই ছিটকে গেছেন দক্ষ উকিলের জন্যে। শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হলেও ফেরার কোনো তাদের দেশ নেই বলে, ফেরা যাবে না। বাধ্য হয়ে শেষ চেষ্টা তাদের টরন্টোর শহরের এক মেক্সিকান গ্যাংস্টার সিলিনকে বিয়ে করবে। তিনি গ্যাংস্টারসহ সিলেক্টেট আরও ক’জনের সঙ্গে যখন তাদের ইচ্ছা যৌনসঙ্গী হতে হবে। পাঁচ সন্তানের মুখ চেয়ে মা সেলিন ঠিক করে ফেলেছেন তাই করবেন।

এরপর বেশ বছরের গ্যাপ। এর মধ্যে আমার মহাভক্ত সুবোধ বারবার বলে আমাকে তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। মেয়েটি মাত্র বাইশ বছরের লেবানিজ মেয়ে। সে নুডবার জাঞ্জিবারে নাচে। বারটি বেশ বড় প্রায় তিনতলা, বয়সও হয়েছে আশির মতো। আমিও যাই সেখানে মাঝেমধ্যে খুব ডিপ্রেস হয়ে গেল। সুবোধ ঢাকার বিক্রমপুরের স্বপ্নের জারে আচারের মতো ডুবে থাকা ছেলে। এ রকম ছেলে কীভাবে এমবিএ করে ভালো চাকরি করে বিধবা মা আর তিন ছোট ভাইবোনের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে ভালোই করছিল। কানাডিয়ান কোম্পানি লাভলিনের সঙ্গে তাদের কোম্পানির সংযোগ। সেই সূত্রে টরন্টো ট্রেনিংয়ে এসে পলিটিক্যাল এসাইলাম সিক করে বসে আছে। শুধুমাত্র মা ও ছোট তিন ভাইবোনকে একটা সুন্দর দেশ দেবে বলে।

সুবোধ আর আমি জাঞ্জিবারে ঢুকে এক কোণের টেবিলে বসলাম। ওয়েট্রেস রেড ওয়াইন দিয়ে গেল। স্টেজে নিকেল করা স্টিলের বার ধরে শরীর মুচড়েমুচড়ে নাচতে-নাচতে একে-একে কাপড় খুলছে ড্যান্সার।

সুবোধকে আমি অনেক বুঝিয়েছি এই তীব্র প্রেমের স্রোতে পা না বাড়াতে। ঊনত্রিশ বছরের স্বপ্নময় যুবক আমার কথা মানতেই চায় না। সে সারাকে নিয়ে বাংলাদেশ মাতাবে। দীর্ঘদিন থেকে তাদের এই প্রেম। সারা ড্রাগডিলার গ্যাংস্টারের মেয়ে সবাই জানে, আসল মেয়ে না। সারার মা ও ভাইবোনরা জিম্মি এই বীভৎস লোকের কাছে সারা নুডবারে নেচে যা কামাই করে তা দিয়ে দেয় লোকটিকে। একটাই শর্ত, তার মায়ের মতো তার সঙ্গে সেক্স করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যাশ ডলার পেলে কিনা হয়। মুখ দিয়ে লালা বেরুলেও নিজেকে মেয়েটি থেকে দূরে রাখে। মনে মনে ভাবে সেনোরিতা যাবে কই! আজ হোক, কাল হোক আমার ভোগে উঠতেই হবে। সুবোধ এই নিষ্পাপ মেয়েকে নিয়ে পালালে তার রাজনৈতিক আশ্রয় কেসের বারোটা বেজে যাবে। তবু সে মনের কথা শুনবে। মাকেও পটিয়ে ফেলেছে। ছেলে ফিরবে দেশে তাই মা তো আনন্দে আটখানা। সারা ইয়া লম্বা হিল পরে টক টক করে সামনে এসে দাঁড়াল। বড় বড় চোখের ভেতরে যেন অথৈ জলরাশি ছলাৎ ছলাৎ করছে। কী অপরূপ একটি মানুষের একি ভাগ্য! এ রকম সদ্য ফুটে ওঠা যৌবনবতী মানুষের জন্যে সুবোধ কেন! যে কেউ প্রাণপণ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার সামনে আসতে সুবোধ আলাপ করিয়ে দিলে- সি ইজ সারা!

আমি অপলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু কণ্ঠে বল্লাম-

– নো! সি ইজ ফারা!

লিপস্টিক লাগানো সুন্দর ঠোঁটে একটি আঙুল চেপে আমাকে চুপ করতে বল্লেন।

-আই অ্যাম নো মোর ফারাহ। আমি এখানে সারা। আমাদের আশীর্বাদ করবেন যাতে আমি নিজের জন্যে সুবোধকে বিপদে না ফেলি। আমি মনে মনে ঈশ্বল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম- ওরা বিপদমুক্তভাবে যেন কানাডা ছেড়ে বাংলাদেশে যেতে পারে। অটোয়া বাংলাদেশে এমবাসি থেকে সুবোধ সারার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ভিসা সব করিয়ে রেডি তারা।

আসলে প্রার্থনা-দোয়া সব বুলসিট! মাত্র পাঁচ দিন পরে খবর পেলাম, মেক্সিকান গ্যাংস্টার তার লোকজন নিয়ে টরন্টো পিয়রসন এয়ারপোর্ট থেকে তাদের ধরে ফেলেছে। মেয়েকে রেখে সুবোধকে মেরে থেঁতলা করে প্লেনে তুলে দিয়েছে। ভেবেছি কেন এমন হলো! এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। কাকপক্ষী জানত না তাদের পালানোর কথা। তবে সেই একটি ছোট্ট ভুল। সারা কিংবা ফারাহ তার মাকে শুধু বলে ছিল, তাদের পালাবার কথা। মা নিজের ও অন্য চার সন্তানের ইমিগ্রেশনের জন্যে একটি মেয়েকে বলি দিলেন।