দর্পণ ডেস্ক : সীমিত আকারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন। তবে কতগুলো আসনে বা ভোট কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরেই দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৫০ হাজার কেনা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারে ইসি। একাধিক নির্বাচন কমিশনার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সঠিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী থেকে দক্ষ লোক নেয়া হতে পারে। কমিশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ব্যক্তিগত মত হচ্ছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা আছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনে এখনো ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবেমাত্র একনেকে ইভিএম প্রকল্প পাস হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সংসদে আরপিও সংশোধনী পাস হওয়ার পর ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনের পর কীভাবে বিতর্ক এড়িয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেয়া যায় সে বিষয়ে চিন্তা করছে কমিশন। তবে বড় পরিসরে না দিয়ে সীমিত আকারে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের সঠিক ব্যবহার করে সকল রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জন করতে চায় ইসি। এজন্য ইভিএম কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সহায়তায় সেনাবাহিনী নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, ৩০০ আসনে একটি করে কেন্দ্রে হলেও ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ইসি। কিন্তু এত বিস্তৃতভাবে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনী দক্ষ লোকবল নেই ইসির। সিটি নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের সময় বিষয়টি ইসির নজরে আসে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্বল্প সময়ে এত পরিমাণ লোকবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করাও দুরূহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি এসেছে। এসব দলের বেশির ভাগই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে। তাই সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে যদি তাদের আস্থা বাড়ে সেক্ষেত্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই।
‘নির্বাচন ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম কিনছে ইসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ইভিএমের মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
ইভিএম তৈরির জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্ব কারিগরি ও পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নমুনা ইভিএম তৈরি করেছে। ২০১০ সালের ১৭ জুন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার শুরু করেন তত্কালীন ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। কারিগরি ত্রুটির কারণে বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন এ মেশিন ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। বর্তমান সিইসি নূরুল হুদার কমিশন পুনরায় নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এ ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি সংযোজন করে সংশোধনীর প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে জেলা/ উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত না হলেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। কেননা জাতীয় নির্বাচনের পর মার্চ/এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে কমিশনের।সূত্র : ইত্তেফাক