আমচাষের জেলা রাজশাহী হলেও সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুর
গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। শুরু হয়েছে ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে মৌ মাছিদেরও ছোটাছুটি শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে আমচাষিদের ব্যস্ততা।
এটি মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননসহ জেলার আম বাগানগুলোর সাধারণ দৃশ্য।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসেই প্রতিটি গাছেই পুরোপুরিভাবে মুকুল ফুটে যাবে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, আমচাষে প্রথমে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর কথা। এ দু’জেলায় আম উৎপাদন হয় বেশি। কিন্তু স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম এক নম্বর। আম সুস্বাদু হওয়ায় মেহেরপুরের আমের চাহিদা দেশের সব জেলাতেই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমের বাগানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের মুজিবনগরে বৃটিশ শাসনামলে তৈরি মুজিবনগর আম্রকাননে ১২শ’ আমগাছ আছে। ওই বাগানে ১২শ’ আমগাছ ১২শ’ জাতের।
উল্লেখ্য, এখন মেহেরপুর জেলায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর কৃষি জমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান।
আরও পড়ুন – আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের আমচাষি রায়হানুল হক জানান, শীতের তীব্রতা থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ থেকে আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের আমচাষি মুকুল বিশ্বাস জানান, গাছের যত্ন নিলে “অফ ইয়ার” বলে কিছু থাকে না। প্রতি বছরই গাছে আম আসবে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মালসাদহ গ্রামের আমবাগান ক্রেতা আজমাইন হোসেন জানান, মুকুল আসার আগেই তিনি প্রতিটি আমবাগান এক থেকে তিন বছরের জন্য কিনে নেন। তার ১২টি বাগান কেনা আছে। এবার দু‘একটি গাছ ছাড়া প্রতিটি বাগানেই মুকুলে মুকলে ভরে গেছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, মূলত তিনটি পর্যায়ে আমের মুকুল আসে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সব গাছে মুকুলে ভরে যাবে। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। আমচাষের জেলা রাজশাহী হলেও সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুর। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। একইসঙ্গে নতুন নতুন বাগানগুলো তৈরি হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিট জাতের। নিয়মিত যত্ন নিলে আমের অফ ইয়ার বলে কিছু থাকে না।