বাতাসে থাকা ভাইরাস ও ব্যকটোরিয়া ঠেকাতে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার যথেষ্ঠ না
দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে জীবনঘাতী করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা যেমন হুহু করে বাড়ছে, তেমনই বেড়ে চলেছে এর কারণে মৃত্যুর মিছিল। দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এনিয়ে খবরের শেষ নেই। এসব খবরের ছবি ও ভিডিওতে একটি সাধারণ দৃশ্য সবার চোখে পড়ছে, তা হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার। কিন্তু ভয়ংকর এই ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক কতোটুকু কার্যকর?
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সাধারণত, বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হয় নাক ও মুখ ঢাকা এই মাস্ক। তবে বায়ুবাহিত ভাইরাস ঠেকাতে সেগুলো কার্যকর তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ হয়েছে ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এর অন্য একটি সুবিধা আছে, তা হলো মুখে মাস্ক পরা থাকলে, হাত থেকে মুখে জীবাণুর বিস্তার ঘটতে পারে না।
লন্ডনের সেন্ট জর্জ ইউনিভার্সিটির ডা. ডেভিড ক্যারিংটন সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে বলেন, “বাতাসে থাকা ভাইরাস ও ব্যকটোরিয়া ঠেকাতে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার যথেষ্ঠ না, কারণ সেগুলো খুবই ঢিলেঢালা, কোনো এয়ার ফিল্টার থাকে না এবং চোখ খোলা থাকে।”
এই চিকিৎসক আরও বলেন, তবে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কগুলো পরা থাকলে হাঁচি বা কাশি দিলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম থাকে এবং হাত থেকে মুখে জীবাণুর বিস্তারে কিছুটা নিরাপত্তা দেয়। ২০১৬ সালে করা এক জরিপে দেখা যায়, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় কমবেশি ২৩ বার তার মুখমণ্ডলে স্পর্শ করে।
ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল জানান, হাসপাতালের ভেতরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে সাধারণ মাস্ক বিশেষভাবে উন্নত প্রযুক্তির এয়ারফিল্টার লাগানো রেসপিরেটরের মতোই ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে কাজ করে। কিন্তু সাধারণ পরিবেশে মানুষের মধ্যে চালানো নানা পরীক্ষা দেখা যায়, এই মাস্ক ব্যবহারের ফল অতটাও কার্যকর না। বিশেষ করে দীর্ঘসময় ধরে টানা মাস্ক পরে থাকা আসলেই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
এবিষয়ে ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের ডা. জেক ডানিং বলেন, “যদিও এমন ধারণা আছে যে ফেসমাস্ক পরা উপকারী হতে পারে, তবে ক্লিনিক্যাল পরিবেশের বাইরে এগুলো থেকে বেশি উপকার পাওয়ার খুব কম প্রমাণ আছে।”
তিনি আরও বলেন, মাস্ক সঠিক নিয়মে পরতে হবে, সময়মতো পরিবর্তন করতে হবে এবং ফেলে দেওয়ার সময় সাবধান থাকতে হবে।
মানতে হবে আরও কিছু
যুক্তরাজ্যের কুইন’স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের ওয়েলকাম-উলফসন ইন্সটিটিউট ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের ডা. কনর বামফোর্ড জানান, সংক্রমণ রোধে সাধারণ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই বেশি কার্যকর হয়। হাঁচি ও কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাত মুখে না দেওয়া-এমন কিছু নিয়ম মেনে চললেই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) মতে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে-
১. গরম পানি ও সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে।
২. যথাসম্ভব চোখ ও নাক স্পর্শ করা বন্ধ করতে হবে।
৩. স্বাস্থ্যকর জীবনব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।